ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় ৩৬ বছরের পুরানো সেচস্কীমের পানি সুবিধা দিতে বাধা, কৃষকদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চকরিয়া পৌরসভার করাইয়াঘোনা এলাকায় ফরিদুল আলম নামের একব্যক্তির ৩৬ বছরের পুরানো একটি সেচ স্কীম পরিচালনায় বাধার অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বোরোধান চাষে পানি সুবিধা নিয়ে অনিশ্চিতা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আতঙ্কিত কৃষকেরা স্কীমের বাধা অপসারণপুর্বক পানি সুবিধা নিশ্চিতের দাবিতে সোমবার ১৩ ফেব্রুয়ারী বিকালে চকরিয়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের নাপিতের চর বিলে বিক্ষোভ করেছে।

স্কীম মালিক চকরিয়া পৌরসভার করাইয়াঘোনা এলাকার মোক্তার আহমদের ছেলে ফরিদুল আলম বলেন, ১৯৮৭ সালে তিনি এলাকার কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে স্কীমটি চালু করেন। শুরু থেকে কাহারিয়াঘোনা, করাইয়াঘোনা ও রামপুর মৌজার প্রায় ৮২ কানি জমিতে ডিজেল চালিত মেশিন বসিয়ে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে বোরোধান চাষের জন্য পানি দিয়ে আসছি।

ফরিদুল আলম বলেন, দীর্ঘ বছর ডিজেল চালিত মেশিন বসিয়ে সেচ সুবিধা দিয়ে আসার পর ২০০৫ সালে কৃষি বিভাগ আমার স্কীমের নামে বিদুৎ মিটার দেওয়া হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর সরকার নির্ধারিত সেচ খরচ নিয়ে কৃষকের জমিতে পানি দিয়ে আসছি। প্রথমদিকে নিজের টাকায় ড্রেন তৈরি করে কৃষকের জমিতে পানি দিই। পরে ২০০৮ সালে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) আমার স্কীমের জন্য ১৪শত মিটার পাকা ড্রেন তৈরি করে দেয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ৩৬ বছর ধরে আমি কাহারিয়াঘোনা করাইয়াঘোনা ও রামপুর মৌজার জমিতে সেচ সুবিধা দিয়ে আসছি, কোনদিন কারো অভিযোগ ছিল না আমার বিরুদ্ধে। এলাকার কৃষকেরাও কোনদিন অভিযোগ আপত্তি করেনি। এমনকি চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন অথবা কৃষি বিভাগের কাছেও আমার নামে কোন অভিযোগ নেই।

অথচ চলতি ২০২৩ সালে হঠাৎ করে এসে আমার এলাকার বাসিন্দা বাদশা মিয়ার ছেলে মো জাবের জোরপূর্বক নতুন একটি স্কীম বসিয়ে কৃষকদের নানাভাবে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে পানি নিতে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এমনকি আমাকে স্কীম পরিচালনায় বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে আমি চকরিয়া উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও জেপি দেওয়ান এর কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।

ফরিদুল আলম বলেন, স্কীম পরিচালনায় বাধার অংশ হিসেবে সর্বশেষ রোববার ১২ ফেব্রুয়ারী রাতে নাপিতের চর বিলে এসে গুলি ছুঁড়ে আমার স্কীমের ড্রেনে বসানো পাইপ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। এতে আমার বিপুল টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। ঘটনাটি জানানো হলে গতকাল সোমবার চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো রাহাত উজ জামান, চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বিক্ষোভ শেষে কৃষক নুরুল আবছার, মোহাম্মদ শফি, আবুল কালাম, শামসুল আলম, জাফর আলম, বদিউল আলম, আবুল হাশেম, হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ ইসমাইল, আক্তার হোসেনসহ অনেকে বলেন, আমরা তিনযুগের বেশিসময় ধরে ফরিদুল আলমের স্কীম থেকে জমিতে চাষের জন্য পানি নিই।

এদিকে স্কীম মালিক ফরিদুল আলমের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অপর স্কীম মালিক মো.জাবের। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, আমি রামপুর মৌজার জমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি নতুন স্কীম বসানো অনুমোদনের জন্য চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরে আবেদন করি। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা কৃষি বিভাগ স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে চকরিয়া উপজেলা সেচ ব্যবস্থাপনা কমিটি ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট আমাকে স্কীম বসানোর ছাড়পত্র দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি স্কীমের পানি দিচ্ছি রেললাইনের পশ্চিমে রামপুর মৌজার জমিতে, আর ফরিদুল আলম পানি দিচ্ছেন রেললাইনের পুর্বপাশে কাহারিয়াঘোনা করাইয়াঘোনা মৌজার জমিতে। দুইজনের জমি ও মৌজার অবস্থান উপজেলা প্রশাসন তদন্ত প্রতিবেদনে বলে দিয়েছেন। তাই ওনার স্কীম পরিচালনায় বাধা দেওয়ার অভিযোগটি অসত্য। পাইপ ভেঙে দেয়ার ঘটনায় আমরা জড়িত নই।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, স্কীম পরিচালনায় জটিলতা সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আপাতত কৃষকের সেচ সুবিধা সচল রাখতে সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে দুইপক্ষের বিষয়টি সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: